প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ৮:৩৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ৮:১০ পূর্বাহ্ণ
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন অনেকেই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন। সেসব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে সরকার।
লাইসেন্স থাকা এসব অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এসময়ের মধ্যে যারা বৈধ অস্ত্র জমা দিবে না তাদের সেসব অস্ত্র অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানায় সরকার।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩৪৩টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশনার পর সেখান থেকে জমা পড়েছে ৩০৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। বাকি ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো জমা দেয়নি। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় অস্ত্র লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে ৩৮২টি। জমা হয়েছে ৩৬১টি। জমা দেয়া হয়নি ২১টি। চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলে এখনো ৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়া হয়নি। এসব বৈধ অস্ত্র এখন অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে যৌথবাহিনী।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, ইপিজেড, পাহাড়তলী, বাকলিয়া, পতেঙ্গা, আকবরশাহ, কর্ণফুলী ও সদরঘাট থানায় ইস্যুকৃত সকল লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। নগরের বায়েজিদ থানায় একটি একনলা বন্দুক, বন্দর থানায় একটি একনলা বন্দুক ও চকবাজার থানায় একটি রাইফেল জমা পড়েনি। এছাড়া ডবলমুরিং থানায় একটি রাইফেল ও একটি শর্টগান জমা হয়নি। খুলশী থানায় ২টি পিস্তল, একটি রিভলবার ও একটি দো-নলা বন্দুক জমা দেয়নি। এদিকে চান্দগাঁও থানায় ২টি শর্টগান, ২টি রাইফেল ও একটি দো-নলা বন্দুক জমা দেয়নি। পাঁচলাইশ থানায় ২টি শর্টগান ও ২টি পিস্তল জমা পড়েনি। সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমে পড়েনি কোতোয়ালী থানায়। এ থানায় মোট ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়া হয়নি। এরমধ্যে ৬টি শর্টগান, ৪টি পিস্তল, ৩টি দো-নলা বন্দুক, ২টি একনলা বন্দুক ও একটি রাইফেল জমা দেয়া হয়নি।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, যেসব অস্ত্র জমা হয়নি তার মধ্যে অধিকাংশ মালিক বিদেশে রয়েছেন এবং অনেকে মারা গেছেন। আবার অনেকের বাসা অন্য জায়গায়, ঠিকানা কোতোয়ালি থানা এলাকায়। এসব অস্ত্র উদ্ধারে ইতিমধ্যে আমরা অফিসার ভাগ করে দিয়েছি। তারা অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম জেলায় এখনো জমা হয়নি ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র। লোহাগাড়া, পটিয়া, সন্দীপ, জোরারগঞ্জ, চন্দনাইশ, মিরসরাই, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও ভূজপুর থানায় লাইসেন্সকৃত সব অস্ত্র জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রাউজান থানায় একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল জমা পড়েনি। বাঁশখালী থানায় একটি একনলা বন্দুক, একটি শর্টগান ও ফটিকছড়ি থানায় একটি শর্টগান এবং সাতকানিয়া থানায় ২টি শর্টগান ও একটি একনলা বন্দুক জমা দেয়নি। বোয়ালখালী থানায় একটি বন্দুক ও একটি শর্টগান জমা দেয়নি। হাটহাজারী থানায় ২টি রাইফেল, একটি পিস্তল, একটি শর্টগান ও একটি একনলা বন্দুক জমা দেয়নি। সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমা পড়েনি রাঙ্গুনিয়া থানায়। সেখানে ৬টি একনলা বন্দুক জমা দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, এখনো অনেকে অস্ত্র জমা দেননি। নির্দিষ্ট সময়ে যারা অস্ত্র জমা দেননি তাদের বৈধ এসব অস্ত্র অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। যৌথবাহিনী এসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের সময়ে এদের অনেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট গত সরকারের শাসনামলে দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। পরে গত ২৭ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার সময়ও বেঁধে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তর কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে মঙ্গলবারের (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময়ের মধ্যে কেউ এসব লুণ্ঠিত অস্ত্র জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ৩ তারিখের পর তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে এবং অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হবে।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, যে অস্ত্রগুলো জমা হয়নি সেগুলো উদ্ধারে আমরা কাজ করছি। আমরা তালিকা ধরে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। কিন্তু বাড়িতে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ৩ তারিখের পরেও অনেকে আমাদের কাছে, অনেকে জিডিমূলে অস্ত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে বিদেশ থেকে এসেও অস্ত্র জমা দিয়েছেন। তাদের কাছে কারণ দর্শানোর চিঠিও দেওয়া হয়।