বিজয়ের মাস এলেই শুরু হয় শীতকালীন বিজয় মেলা। এই মেলার নাম করে খেলার মাঠ দখল করে বসানো হয় বাণিজ্যিক স্টল ও দোকানপাট। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে মাঠটি ৭ দিনব্যাপী বিজয় মেলার প্রস্তুতির কারণে দখল হয়ে আছে, ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের খেলাধুলা। এ নিয়ে স্থানীয় শিশু-কিশোর, খেলোয়াড় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
খেলার মাঠে বাণিজ্য মেলা
বিজয় মেলার নামে মাঠে গড়ে তোলা হয় অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর ফলে মাঠের সবুজ ঘাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মেলা শেষে মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়দের আপত্তি সত্ত্বেও প্রশাসনের অনুমোদনে এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে বলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে। অনেকে দাবি করছেন, এমন একটি খেলার মাঠে বাণিজ্যিক মেলা আয়োজন কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, আউটার স্টেডিয়াম থেকে বিজয় মেলা সরিয়ে সিআরবি এলাকায় আয়োজন করা হবে। এই সিদ্ধান্তকে ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় খেলোয়াড়রা স্বাগত জানিয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটায় ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
খেলোয়াড়দের ক্ষোভ
কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্রীড়া একাডেমির প্রশিক্ষণের কেন্দ্র। এখানে ব্রাইট ক্রিকেট একাডেমি, চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমি, সি-স্পোর্টস একাডেমিসহ ৮-১২টি একাডেমি কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রায় ২০০-২৫০ খেলোয়াড় প্রতিদিন এখানে অনুশীলন করে। মেলার কারণে একাডেমিগুলো তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানসহ অনেক কৃতি খেলোয়াড় এই মাঠে অনুশীলন করে গড়ে উঠেছেন। অথচ মেলার কারণে এই ঐতিহাসিক মাঠের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
মাঠ রক্ষার আহ্বান
২০২৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছিলেন, খেলার মাঠে আর কোনো মেলা হবে না। এমনকি এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামের পাশে রাতের আঁধারে মেলা বসানোর চেষ্টা করলে তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
কিন্তু আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় স্থানীয় খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা হতাশ। সাবেক ফুটবলার মনির হোসেনের মতে, এখনো সময় আছে মেলা বন্ধ করার। সিটি মেয়র যদি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করেন, তবে মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিল করা সম্ভব।
ভবিষ্যতের দাবি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে নতুন খেলার মাঠ গড়ে তোলা হবে। তবে খেলোয়াড়দের দাবি, বিদ্যমান খেলার মাঠগুলো রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
খেলার মাঠকে কেবল খেলার জন্য উন্মুক্ত রাখতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
সহ-সম্পাদক :
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : বাবু প্রমেশ বড়ুয়া (USA)
আইন উপদেষ্টা : এডভোকেট মোহাম্মাদ শাহজাহান
© 2024 PSP Vision. All Rights Reserved.