সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
HomeNewsনতুন কালুরঘাট সেতু পাচ্ছেন চট্টগ্রামবাসী
spot_img

নতুন কালুরঘাট সেতু পাচ্ছেন চট্টগ্রামবাসী

নিউজ ডেস্ক

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রামের বহু কাঙ্ক্ষিত কালুরঘাট নতুন সেতু প্রকল্পসহ ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এগুলো বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২৪ হাজার ৪১২ কোটি  ৯৪ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

 

একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি কোথায় যায় এবং একজন অফিসার কয়টা করে জীপ গাড়ি ব্যবহার করেন এসব খুঁজে বের করা হবে। এজন্য একনেক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, জেলা উপজেলাসহ সারাদেশে সরকারি গাড়ি আছে তার একটি তালিকা করা হবে। দেখা হবে কোন গাড়ি, কোথায় আছে, কতদিন কার্যকর থাকে সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

 

একনেক সভায় জানানো হয়, ১৯ হাজার ৫৬ কোটির সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪২৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।  নতুন করে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ প্রকল্পে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও অন্যন্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে।

 

কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প। এটি ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া। অথচ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০গুণ ব্যয়ে প্রকল্পটি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অনুমোদন পেয়েছে।

 

একনেক সভায় মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ছে ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পটিতে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কক্সবাজার মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমানোসহ ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো। প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ২৯১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ৭৬০ মিটার বার্থ নির্মাণ, ৩৯৭ মিটার ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ, সড়ক প্রতিরক্ষাসহ ১৬.৫২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে  একটি নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয়  এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রকল্প তৈরি করেছে এবং  ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবান  করার লক্ষ্য  নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৫৬৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বাকি ৭ হাজার ১২৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ দেবে ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট  করপোরেশন (ইডিসিএফ) এবং  কোরিয়ার ইকোনোমিক  ডেভেলপমেন্ট  প্রমোশেন  ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)। অর্থাৎ সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ২ মিটার করা হয়েছে। আর প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্সের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৮ মিটার আর প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় বেড়েছে ১০ হাজার ৪০২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

 

এর আগে ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তখন একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। এবার প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১০ গুণেরও বেশি।

 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ১০ গুণ বেশি ব্যয় ধরায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকল্পটি আর পাস করা হয়নি। প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

 

এর আগে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি রেল সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারি অর্থায়নে ২০১২ সালে এসএমইসি ও ডব্লিউআইইসিওএন কোং লিমিটেড এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে।

 

সরকার সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে ইডিসিএফের নিয়োজিত পরামর্শক আগের ফিজিবিলিটির ভিত্তিতে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ মিটার বিবেচনা নিয়ে ২০১৬ সালে পুনরায় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করে। এ ফিজিবিলিটি স্টাডির আলোকে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের জন্য প্রণীত প্রকল্পের ডিপিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটির অনুমোদন না দিয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়, প্রস্তাবিত সেতুর সড়ক ও রেল সেতুর জন্য আলাদা আলাদা ডিজাইন প্রণয়ন করে পুনরায় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।

এ নির্দেশনা এবং পরে ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট পয়েন্টে রেল কাম রোড সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার করার ফলে নতুনভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য ইডিসিএফের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর উশিন অ্যান্ড দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন জেভির সঙ্গে পরামর্শক চুক্তি সই করা হয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের মে মাসে চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি দাখিল করে। ওই ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলওয়ের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং দুই লেনবিশিষ্ট সড়কপথের সুবিধা রেখে একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়।

ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, প্রকল্পটি ২০১৮ সালে যখন প্রস্তাব দেওয়া হয় তখন এর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৬২ মিটার। বর্তমানে তা ১২ দশমিক ২ মিটার করা হয়েছে। এতে সেতুর উচ্চতাসহ ভায়াডাক্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আগে একনেক সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২০১৫ সালের রেট সিডিউল অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান প্রস্তাবে হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুসারে ব্যয় প্রাক্কলন করায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়,  প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করা, যা রেলপথে ভারত, মিয়ানমার ও  চীনের সাথে সংযোগের পথ সুগম করবে।

 

তিনি আরো বলেন, রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১.৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।

spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

আরও সংবাদ

spot_img