বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০২৫
HomeNewsFinanceবাংলাদেশ ২০২৫: টালমাটাল রাজনীতি, চাপা সম্ভাবনা ও জনআস্থার সন্ধিক্ষণ
spot_img

বাংলাদেশ ২০২৫: টালমাটাল রাজনীতি, চাপা সম্ভাবনা ও জনআস্থার সন্ধিক্ষণ

২০২৫ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। টানা রাজনৈতিক উত্তেজনার পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ, মধ্যবর্তী সরকারের উত্থান, অর্থনৈতিক চাপ, জনঅসন্তোষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা—সবকিছু মিলিয়ে দেশ এখন এক অস্থিরতা ও আশার দ্বন্দ্বে দাঁড়িয়ে। পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের সামনে যেমন রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি রয়েছে পুনর্গঠনের এক নতুন সম্ভাবনাও।

রাজনৈতিক পালাবদল ও নেতৃত্বের রূপান্তর
গত বছরের গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে মধ্যবর্তী সরকারের গঠন—এটি ছিল এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ইউনুস সরকার ‘সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও বাস্তবায়নে নানা প্রশ্ন উঠছে।

বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর দাবি—নির্বাচন হতে হবে ২০২৫ সালের মধ্যেই। অন্যদিকে, সরকার বলছে সুষ্ঠু পরিবেশ গড়তে সময় প্রয়োজন, তাই ২০২৬ সালের এপ্রিলের আগে নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে রাজনৈতিক বিভক্তি এবং অনিশ্চয়তা দিনদিন ঘনীভূত হচ্ছে।

জনআস্থার সংকট ও দমনমূলক অভিযানের অভিযোগ
বর্তমান সরকার একদিকে প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বললেও অন্যদিকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর নামে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছে—এমন অভিযোগ উঠছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করা হয়েছে বলেও সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন পক্ষ।

এইসব ঘটনায় সরকার ও বিরোধী শক্তির মুখোমুখি অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

অর্থনীতি ও জীবনের বাস্তবতা
দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বাংলাদেশকে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। তবে এই সহায়তার বিনিময়ে নানাবিধ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সরকার নতুন বাজেটে ৭.৯ ট্রিলিয়ন টাকার ব্যয় প্রস্তাব করেছে। তবে বাজেট বাস্তবায়ন ও বৈষম্য হ্রাসে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েই জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য শক্তির পথে যাত্রা
বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে সরকার বড় পরিসরে সৌরশক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি ভবনে সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রতিবেশী টানাপোড়েন
সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় একটি দুর্গা মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় দিল্লি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যা আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে, সরকার পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের দিকে ঝুঁকছে।

২০২৫ সালের বাংলাদেশ এক অনিশ্চিত, কিন্তু সম্ভাবনাময় সময় পার করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নির্বাচনকালীন সঠিক সিদ্ধান্ত, মানবাধিকার রক্ষা এবং অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত না করা গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

তবে এখনো আশার জায়গা আছে—যদি সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল শাসন নিশ্চিত করা যায়। সামনে হয়তো আলো আছে, কিন্তু তার জন্য চাই একসাথে এগোনোর মানসিকতা।

শেষ কথাঃ
আমরা যেন বিভাজনের পথ না বেছে, বরং মিলনের পথ খুঁজি।
কারণ, দেশটা আমাদের সবার। 🇧🇩

লেখক: পারিতুষ বড়ুয়া রানা

spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

আরও সংবাদ

spot_img